আজিজুল হকের মুক্তিযুদ্ধের গল্প

এবারে সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারে সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠের এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছিল। ১৮ মিনিটের এই ভাষণে বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চের ভাষণের আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল বিভিন্ন পেশার মানুষ। বিশেষ করে ছাত্র ও তরুণরা।

তেমনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মোহনপুর ইউনিয়নের দহকুলা গ্রামে কৃষক পরিবারে ১৯৫৩ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা আজগর আলী, ছিলেন একজন কৃষক, মা জমিলা খাতুন গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ১৯৬৯ সালে মোহনপুর হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন শাহজাদপুর কলেজে।

১৯৭১ সালে আজিজুল হক ছিলেন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী। এদিকে, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত জনসমুদ্রে জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। তার এই ভাষণে অনুপ্রাণিত হন আজিজুল হকসহ তার গ্রামের আরো অনেকে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে নিজ গ্রামে একটি মুক্তিযুদ্ধের দল গঠন করেন আজিজুল হক, তায়জাল হোসেন, ছরাফ আলী, আব্দুল রশিদ, শামসুল হক, আবুল কাশেম, মুজিবুল হক ও মাজেদ আলী। যুদ্ধের জন্য তৈরী হতে থাকেন তারা। নিজ গ্রামে প্রাথমিকভাবে ট্রেনিংও নেন, ট্রেনিং করান বেলাল দারোগা। নিজ গ্রামে প্রাথমিক ট্রেনিং শেষ করে পরে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান তারা। সে সময় যোগাযোগের পথ ছিল নৌপথ মানে নৌকা।

সিরাজগঞ্জের রান্ধনী বাড়ী থেকে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নৌকায় উঠেন সবাই। তৎকালীন একশ টাকা ভাড়া দিয়ে তারা ভারতের মানকাচর পৌঁছান। তাদের ভারতে যেতে সময় লাগে প্রায় দুইদিন। ভারত রৌমারীতে মুক্তিযোদ্ধার রিক্রুট ক্যাম্প ছিল। রৌমারী ছিল মুক্ত এলাকা। তারা সবাই অবস্থান নেন রৌমারীতে। রৌমারী থানার কমান্ডার ছিল সিরাজগঞ্জ কলেজের ভিপি ইসমাইল হোসেন। রৌমারীতে অবস্থান করার পরে, উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য তাদের ১৬০ জনের একটি দল তুরা শহর থেকে বিমানে দিল্লীতে চলে যেতে চায়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সেখানে ট্রাক এক্সিডেন্ট হয়।

তাদের আর যাওয়া হয় না। পরে স্থানীয় ভারতের আর্মি ক্যাম্পে একদিন অবস্থান করেন তারা। সেখান থেকে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পে। এখানে অবস্থান করে ট্রেনিং নেন। তিন মাস বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনিং গ্রহণ করেন। শবে বরাত, রমজান, ঈদ সব ভারতেই কেটে যায় তাদের। রোজার ঈদের পরে তারা দেশে প্রবেশ করেন। প্রথমে তাদের ময়মনসিংহ যেতে বলা হয়। কিন্তু অপরিচিত জায়গা হওয়ার জন্য তারা সেখানে যেতে রাজি হন না। অবশ্য তাদের একটি ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধের দল ছিল। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষ করে আজিজুল হকসহ অনেকেই একত্রে দেশে প্রবেশ করেন। প্রবেশ পথেই পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরে সর্বাধিনায়ক লতিফ মির্জা নৌকা বহরের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। লতিফ মির্জা নৌকা বহর নিয়ে ভারত যাচ্ছেন। আর আজিজুলরা দেশের মধ্যে প্রবেশ করছেন। পরে লতিফ মির্জার নৌকা বহরের সঙ্গে সবাই দেখা করেন।

তারপরে চলে আসেন নিজ মাতৃভূমিতে। নিজ গ্রামে এসেই ক্যাম্প স্থাপন করেন কয়েক গ্রাম পরে রাজমান নামে একটি এলাকায়। রাজমানের ক্যাম্পের কমান্ডার ছিলেন আব্দুল ছামাদ। কমান্ডারের সঙ্গে ছিলেন আজিজুল হক, তায়জাল হোসেন, ছরাফ আলী, আব্দুল রশিদ, শামসুল হক, আবুল কাশেম, মুজিবুল হক ও মাজেদ আলী। এই ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট অপারেশন করতে থাকেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হলো উল্লাপাড়ার শ্রীফলগাঁতী এলাকায় রাজাকারের কমান্ডার ছিলেন মোসলেম উদ্দিন।

‘এবারে সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারে সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠের এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছিল। ১৮ মিনিটের এই ভাষণে বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চের ভাষণের আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল বিভিন্ন পেশার মানুষ। বিশেষ করে ছাত্র ও তরুণরা।

তেমনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মোহনপুর ইউনিয়নের দহকুলা গ্রামে কৃষক পরিবারে ১৯৫৩ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা আজগর আলী, ছিলেন একজন কৃষক, মা জমিলা খাতুন গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ১৯৬৯ সালে মোহনপুর হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন শাহজাদপুর কলেজে।

১৯৭১ সালে আজিজুল হক ছিলেন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী। এদিকে, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত জনসমুদ্রে জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। তার এই ভাষণে অনুপ্রাণিত হন আজিজুল হকসহ তার গ্রামের আরো অনেকে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে নিজ গ্রামে একটি মুক্তিযুদ্ধের দল গঠন করেন আজিজুল হক, তায়জাল হোসেন, ছরাফ আলী, আব্দুল রশিদ, শামসুল হক, আবুল কাশেম, মুজিবুল হক ও মাজেদ আলী। যুদ্ধের জন্য তৈরী হতে থাকেন তারা। নিজ গ্রামে প্রাথমিকভাবে ট্রেনিংও নেন, ট্রেনিং করান বেলাল দারোগা। নিজ গ্রামে প্রাথমিক ট্রেনিং শেষ করে পরে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান তারা। সে সময় যোগাযোগের পথ ছিল নৌপথ মানে নৌকা।

সিরাজগঞ্জের রান্ধনী বাড়ী থেকে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নৌকায় উঠেন সবাই। তৎকালীন একশ টাকা ভাড়া দিয়ে তারা ভারতের মানকাচর পৌঁছান। তাদের ভারতে যেতে সময় লাগে প্রায় দুইদিন। ভারত রৌমারীতে মুক্তিযোদ্ধার রিক্রুট ক্যাম্প ছিল। রৌমারী ছিল মুক্ত এলাকা। তারা সবাই অবস্থান নেন রৌমারীতে। রৌমারী থানার কমান্ডার ছিল সিরাজগঞ্জ কলেজের ভিপি ইসমাইল হোসেন। রৌমারীতে অবস্থান করার পরে, উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য তাদের ১৬০ জনের একটি দল তুরা শহর থেকে বিমানে দিল্লীতে চলে যেতে চায়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সেখানে ট্রাক এক্সিডেন্ট হয়।

তাদের আর যাওয়া হয় না। পরে স্থানীয় ভারতের আর্মি ক্যাম্পে একদিন অবস্থান করেন তারা। সেখান থেকে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পে। এখানে অবস্থান করে ট্রেনিং নেন। তিন মাস বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনিং গ্রহণ করেন। শবে বরাত, রমজান, ঈদ সব ভারতেই কেটে যায় তাদের। রোজার ঈদের পরে তারা দেশে প্রবেশ করেন। প্রথমে তাদের ময়মনসিংহ যেতে বলা হয়। কিন্তু অপরিচিত জায়গা হওয়ার জন্য তারা সেখানে যেতে রাজি হন না। অবশ্য তাদের একটি ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধের দল ছিল। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষ করে আজিজুল হকসহ অনেকেই একত্রে দেশে প্রবেশ করেন। প্রবেশ পথেই পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরে সর্বাধিনায়ক লতিফ মির্জা নৌকা বহরের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। লতিফ মির্জা নৌকা বহর নিয়ে ভারত যাচ্ছেন। আর আজিজুলরা দেশের মধ্যে প্রবেশ করছেন। পরে লতিফ মির্জার নৌকা বহরের সঙ্গে সবাই দেখা করেন।

তারপরে চলে আসেন নিজ মাতৃভূমিতে। নিজ গ্রামে এসেই ক্যাম্প স্থাপন করেন কয়েক গ্রাম পরে রাজমান নামে একটি এলাকায়। রাজমানের ক্যাম্পের কমান্ডার ছিলেন আব্দুল ছামাদ। কমান্ডারের সঙ্গে ছিলেন আজিজুল হক, তায়জাল হোসেন, ছরাফ আলী, আব্দুল রশিদ, শামসুল হক, আবুল কাশেম, মুজিবুল হক ও মাজেদ আলী। এই ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট অপারেশন করতে থাকেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হলো উল্লাপাড়ার শ্রীফলগাঁতী এলাকায় রাজাকারের কমান্ডার ছিলেন মোসলেম উদ্দিন।
মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক
মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক

তার পরিবারের ২২ জন্যই রাজাকার ছিলেন, তার ভাই ভাতিজা, ছেলে ও ভাগ্নেসহ আরো অনেকে। ছামাদ কমান্ডারের নেতৃত্বে আজিজুলরা মোসলেম উদ্দিনের বাড়ি ঘেরাও করেন। রাজাকার মোসলেম উদ্দিনকে হাতেনাতে ধরে নিয়ে আসেন। শুধু ধরেই নিয়ে আসেন না সাথে রাজাকারের বাড়ি থেকে কিছু মালামালও নিয়ে আসেন তাদের ক্যাম্পের জন্য। যাতে করে ক্যাম্পের সদস্যদের খাদ্যের কোনো ঘাটতি না হয়, সেই জন্য মূলত মালামাল নিয়ে আসা হয়। মোসলেম উদ্দিনকে মেরে ফেলা হয়। পরে আবার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে একজন রাজাকারের তথ্য পায় পার্শ্ববর্তী থানার একটি গ্রামের। সাধারণ মানুষদের নানা ভাবে অত্যাচার করছে রাজাকাররা।

পরে একদিন রাতে রাজাকারের বাড়িতে অবস্থান করে কমান্ডার ছামাদ, আজিজুল, তায়জাল মাস্টার ও শামসুলসহ কয়জন মিলে রাজাকারে বাড়ি ঘেরাও করে সেই রাজাকারকেও হত্যা করেন। এদিকে, উল্লাপাড়া থেকে মোহনপুর বাজারে কয়েকজন মিলিটারি প্রতিদিন রেললাইন দিয়ে হেঁটে আসতো টহল দিতে। পাকিস্তানের মিলিটারিদের প্রতিহত করতে পরিকল্পনা করে এবং শ্যামপুর ব্রিজে বাধা সৃষ্টি করে। ছোট একটা যুদ্ধ হয় আজিজুলদের সাথে মিলিটারিদের। ঘটনাস্থলে একজন মিলিটারি নিহত হয়। অন্যরা পালিয়ে চলে যায়। আর নিহত মিলিটারি অস্ত্রটি নিয়ে আসেন তারা। এদিকে রাজাকাদের অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ নিঃস্ব ও নানাভাবে নির্যাতিত হতে থাকেন। ইতোমধ্যে লতিফ মির্জা ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন। পরে লতিফ মির্জা দলের সাথে পরিকল্পনা করে রাজাকারদের দমন করার জন্য দহকুলা রেল ব্রিজে একটি অপারেশন করেন।

সঠিকভাবে রাজাকারদের দমন করতে আজিজুল হকরা দহকুলার হাটের একটি বট গাছের পাশে অবস্থান নেন। আর এদিকে লতিফ মির্জার দল থাকে রেল ব্রিজের উত্তর পাশের দিকে। একটি যুদ্ধ হয়। আজিজুলরা আগেই পজিশন নেন। রাজাকাররা হাঁটের দিকে প্রবেশ করলেই লতিফ মির্জার দল আক্রমণ করে। রাজাকাররা হাঁটের ভেতর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে আর পাল্টা আক্রমণ করতে থাকে। এদিকে আজিজুলরা হাঁটের পাশেই বট গাছের কাছে পজিশন নিয়ে ছিলেন। রাজাকাররা আজিজুলদের দেখে গুলি করে, কিন্তু আজিজুলরা গুলি করে না। তারা চুপচাপ থাকেন। আর এই সুযোগে রাজাকাররা তাদের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে। আর আজিজুলদের দিকে আসলেই রাজাকারদের ধরে ফেলে তারা চারদিক থেকে। ঘটনা স্থানে কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়, অনেকে আবার পালিয়ে যায়। সবার অস্ত্র নিয়ে নেন আজিজুলরা। এভাবে চলতে থাকে তাদের যুদ্ধ। আজিজুল থ্রিনটথ্রি, মিলিটারিদের চাইনিজ রাইফেল ও মার্ক-ফোর দ্বারা যুদ্ধ করেছে। এভাবে যুদ্ধ করতে করতেই দেশ স্বাধীনতা অর্জনের পথে অগ্রসর হয়। যুদ্ধ শেষ, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আজিজুলসহ তার সাথে আরো মুক্তিযোদ্ধারা কয়েক দিন পরেই সিরাজগঞ্জ কলেজ মাঠে প্রবাসী সরকারের অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করেন।

যুদ্ধ শেষে আজিজুল হক ফিরে যান আবার কলেজে। ১৯৭২ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে, পাবনার ভাংগুড়া কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু ডিগ্রিটা শেষ করা হয় না তার। তারপর শিক্ষকতায় পেশায় যোগ দেন মোহনপুর হাইস্কুলে। ১৯৭৪ সালে মমতাজ বেগমকে বিয়ে করেন। পাচঁ সন্তানদের জনক তিনি। পুত্র আব্দুল মালেক ও কন্যা ফাতেমা, হালিমা, খাদিজা ও আরজিনা পারভীন। শিক্ষকতা থেকে আজিজুল হক ২০১৩ সালে অবসরে যান।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *